Background of Geometry | Chanchal Ghosh Nimeshe Anko Vol - 2 | জ্যামিতির প্রেক্ষাপট | চঞ্চল ঘোষের নিমেষে অংক পার্ট - ২


জ্যামিতির প্রেক্ষাপট

(BACKGROUND OF GEOMETRY)

* গণিতশাস্ত্রের বিভিন্ন শাখাসমূহ হল পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি, ঘন জ্যামিতি, স্থানাঙ্ক জ্যামিতি, পরিমিতি ইত্যাদি। এদের মধ্যে জামিতি গণিত শাস্ত্রের একটি বিশেষ গুরুত্বপূন্য শাখা। পৃথিবীর কোন দেশে কখন এবং কীভাবে জ্যামিতি শাস্ত্রের সৃষ্টি তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা খুবই দুঃসাধ্য ব্যাপার। ইউরোপে নবজাগরণের পর যখন আধুনিক বিজ্ঞানের সূত্রপাত হয় তখন থেকেই সমস্ত বিষয়কে বিজ্ঞানসম্মতভাবে উপস্থাপন করার প্রয়াস শুরু হয় এবং বিভিন্ন প্রকারের পরিমাপের প্রয়োজন দেখা দেয়। সেই থেকেই হয়তো জ্যামিতি শাস্ত্রটির সূত্রপাত।

** হিরোডোটাসের মতে, ১৪৫৭ খ্রীষ্টপূর্ব থেকে ১৪১৬ খ্রীষ্টপূর্ব সময়ের মধ্যে সিমোন্সিসের রাজত্বকালে মিশর দেশে প্রজাদের অধিকৃত ভূমির পরিমাপ করার মধ্যে জ্যামিতি শাস্ত্রটির প্রথম সূত্রপাত হয়েছিল।

*** প্রথমে জ্যামিতির তথ্যসমূহ লিপিবদ্ধ ছিল না। জ্যামিতি বিষয়ে সর্বপ্রথম বই গ্রিকপন্ডিত ইউক্লিড রচিত 'এলিমেন্টস অফ জিওমেট্রিক'। গ্রিক দার্শনিক ইউক্লিডকে তাই জ্যামিতি শাস্ত্রের জনক বলা হয়। তিনি জ্যামিতি শাস্ত্রের ব্যাপক উন্নতি সাধন করেন। এমনকী মানুষ ইউক্লিড বললে জ্যামিতিকে বুঝত, জ্যামিতি বললে ইউক্লিডকে বুঝত। তিনি তাঁর নিজের বহু বিশিষ্ট যুক্তি ও সিদ্ধান্ত সুসমৃদ্ধ করে 'Element of Geometry' নামক যে গ্রন্থটি উপস্থাপন করেন তা ছিল মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান। গ্রন্থটির ১৩টি খন্ড ছিল। প্রথম থেকে ষষ্ঠ খন্ড পর্যন্ত অংশে রেখা, ক্ষেত্রফল, বৃত্ত, সামতলিক ক্ষেত্র সম্পর্কিত আলোচনা রয়েছে। বিজ্ঞানের ইতিহাসে অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির অগ্রগতি এক যুগান্তকারী ঘটনা। মিশরীয় যুগ থেকে যে সব জ্যামিতিক জ্ঞান সংজ্ঞা দ্বারা এবং আরোহী সম্পর্কিত অর্জিত হয়েছিল গ্রিকরা তার উত্তরাধিকারী ছিলেন। গ্রিকরা প্রমাণসিদ্ধ করেছিলেন এবং ইউক্লিড সেগুলিকে আশ্রিত করে নিয়মানুবদ্ধ করে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। ইউক্লিডীয় জ্যামিতি প্রায় ২০০০ বছর ধরে প্রচলিত। প্রসঙ্গত বলা যায় যে, প্রসিদ্ধ গ্রিকপন্ডিত থেলস্ প্রাচীন মিশরে শিক্ষা অর্জন করেন এবং জ্যামিতি বিষয়ের ওপর বিশেষ আলোকপাত করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁরই সুযোগ্য ছাত্র পিথাগোরাস জ্যামিতি শাস্ত্রটির আরও বেশি উন্নতি সাধন করেন। তিনিই প্রথম জ্যামিতিকে মুক্তিভিত্তিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রতিস্থাপিত করেন।

জ্যামিতি ও তার প্রয়োজনীয়তা

জ্যামিতি = জ্যা + মিতি

জ্যা অর্থে পৃথিবী বা ভূমি। আর মিতি অর্থে পরিমাপ। অতি প্রাচীনকাল থেকেই গণিতবিদ্যায় একটি অন্যতম প্রধান শাখা হিসাবে জ্যামিতির আবির্ভাব।

'জ্যা' মানে পৃথিবী বা ভূমি আর মিতি' মানে পরিমাপ। সুতরাং জ্যামিতি অর্থে ভূ-পরিমাপ বা ক্ষেত্র পরিমাপ বোঝায়।

প্রাচীন ভারতে এবং মিশরে জমি পরিমাপের প্রয়োজনেই এই শাস্ত্রের সৃষ্টি হয়েছে।

আমাদের ভারতবর্ষে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে জ্যামিতির চর্চা শুরু হয়েছিল। ভারতের আর্য ঋষিরা যাগ-যজ্ঞ করবার সময় নানা ধরনের বেদী তৈরি করেন। এইসব বেদী নির্ভুলভাবে নির্মান করতে নানা সূত্র এবং নিয়ম প্রবর্তিত হত। ঐ নিয়মও সূত্রগুলি শুল্বসূত্র নামে পরিচিত।

প্রাচীন ভারতের মুনিঋষিগণের যাগ-যজ্ঞ এবং কুন্ড ও বেদী নির্মাণের নমুনার আকৃতি নিম্নে দেওয়া হল 


মুনিঋষিগণের যাগ-যজ্ঞের চিত্র



এই 'শুল্বসূত্র' থেকেই গড়ে উঠল এক শাস্ত্র। এর নাম 'ক্ষেত্রতত্ত্ব' বা জ্যামিতি।

মিশর দেশে নীলনদের বন্যার জলে, সমস্ত জমির সীমানা মিলিয়ে যেত। বন্যার জল সরে গেলে জমির সীমানা নিয়ে গন্ডগোল আরম্ভ হত। এই সমস্ত গন্ডগোল মিটাবার জন্য জমির মাপের একট নিয়ম মিশর দেশে গড়ে উঠেছিল, আর তা থেকেই ও দেশে তৈরী হল জ্যামিতি।

•সংজ্ঞা:- গণিত শাস্ত্রের যে শাখায় বস্তু বা পদার্থের আকার, আয়তন, পরিমাপ ও অঙ্কন এবং জমির পরিমাপ সংক্রান্ত বিষয় আলোচনা করা হয় তাকে জ্যামিতি বলে।

• জ্যামিতি পাঠের প্রয়োজনীয়তা •

১। জ্যামিতি পাঠ করলে যে কোন বস্তুর আকার, আয়তন সম্বন্ধে সঠিক ধারণা লাভ করা যায়।
২। কোন বস্তুর দ্বারা দখলিকৃত স্থানের আয়তন পরিমাপ করা যায়।
৩। ভূমি বা জমির পরিমাপ (জরিপ) করা যায়।
৪। কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে - তার যুক্তি, ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
৫। সুদক্ষ কারিগর, দক্ষ শিল্পী হতে হলে জ্যামিতির সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে।
৬। যে কোন পেশায় নিযুক্ত মানুষের যে কোন পরিমাপের জন্য জ্যামিতি শাস্ত্রের সম্যকজ্ঞান প্রয়োজন।
৭। পরিবেশেষে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বাঁচা বাড়ার প্রতিটি মুহূর্তে জ্যামিতি শাস্ত্রের জ্যামিতিতে ব্যবহৃত কিছু চিহ্ন ভূমিকা অপরিসীম।

জ্যামিতিতে ব্যবহৃত কিছু চিহ্ন

জ্যামিতিতে কিছু কিছু বক্তব্য সংক্ষেপে চিহ্নের সাহায্যে বোঝালো হয়। এতে জ্যামিতি প্রমাণের আকৃতি সংক্ষিপ্ত হয় এবং বিভিন্ন ভাষার গণিতজ্ঞেরা সহজে তা বুঝতে পারেন।

নং সাংকেতিক চিহ্ন নাম উদাহরণ
1 সুতরাং বা অতএব সুতরাং বা অতএব পরিবর্তে হয়।
2 যেহেতু সেহেতুর অপেক্ষা রাখে।
3 = সমান 4+2=3+3
4 অসমান বা সমান নয়। 7≠8
5 সমতুল্য/সর্বতো ভাবে সমান a≡b-র অর্থ a ও b অভিন্ন
6 সর্বসম △ PQR ≅ △ MND (দুটি সর্বসম ত্রিভুজ)।
7 সমান্তরাল AB ∥ CD অর্থাৎ AB ও CD সমান্তরাল
8 লম্ব বা সমকোণ AB ⊥ OP অর্থাৎ AB এর উপর OP লম্ব।
9 $\measuredangle$ কোণ $\measuredangle$ ABC
10 $\overrightarrow{\rm}$ রশ্মি $\overrightarrow{\rm AB}$, A হইতে B কে বর্ধিত করা যায়।
11 $\overleftarrow{\rm}$ রশ্মি $\overleftarrow{\rm AB}$, B হইতে A কে বর্ধিত করা যায়।
12 $\overleftrightarrow{\rm}$ রেখা $\overleftrightarrow{\rm AB}$, AB রেখা উভয়দিকে প্রসারিত।
13 $\overline{\rm }$ রেখাংশ $\overline{\rm AB}$, AB একটি রেখাংশ।
14 > বৃহত্তর 8>6
15 < ক্ষুদ্রতর 6>8
16 $\ngtr$ বৃহত্তর নয় $11 \ngtr 12$
17 $\nless$ ক্ষুদ্রতর নয় $ 13 \nless 11$
18 $\geq$ বৃহত্তর ও সমান $x \geq y$, x, y এর থেকে বড় অথবা সমান।
19 $\leq$ ক্ষুদ্রতর ও সমান $x \leq y$, x, y এর থেকে ছোটো অথবা সমান।
20 $\triangle$ ত্রিভুজ $\triangle ABC$ অর্থাৎ ABC একটি ত্রিভুজ।
21 চতুর্ভুজ ▭ ABCD অর্থাৎ ABCD একটি চতুর্ভুজ।
22 $\square$ বর্গক্ষেত্র $\square ABCD$, অর্থাৎ ABCD একটি বর্গক্ষেত্র।
23 আয়তক্ষেত্র ▭ ABCD অর্থাৎ ABCD একটি আয়তক্ষেত্র।
24 সামন্তরিক ▱ABCD অর্থাৎ ABCD একটি সামন্তরিক।
25 রম্বস ABCD, অর্থাৎ ABCD একটি রম্বস।
26 ট্রাপিজিয়াম ⏢ ABCD, ABCD একটি ট্রাপিজিয়াম।
27 বৃত্ত এককেন্দ্রীয় বৃত্ত।
28 পরিধি বৃত্তের পরিধি।
29 $\overset{\frown}{ }$ চাপ $\overset{\frown}{AB}$ অর্থাৎ AB চাপ।
30 $ ^{\circ}$ ডিগ্রী 90° অর্থাৎ 90 ডিগ্রী।
31 $^\prime$ মিনিট 60' অর্থাৎ 60 মিনিট।
32 $^\prime$$^\prime$ সেকেন্ড 60" অর্থাৎ 60 সেকেন্ড।
33 $ ^{\circ}C$ রেডিয়ান কোণ
34 $\pi$ পাই
35 $\div$ ভাগ
36 $\times$ গুণ
37 + যোগ
38 - বিয়োগ
39 ~
A~Bঅর্থাৎ বড় থেকে ছোট বিয়োগ।
40 : অনুপাত
41 ভেদচিহ্ন a∝b



You May Read Also :

Post a Comment

0 Comments